ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল স্থানীয়ভাবে নবাববাড়ি নামে পরিচিত। বর্তমানে নবাব আলী চৌধুরীর উত্তরসূরিরা এই রাজবাড়ির দেখাভাল করছেন এবং পর্যটকদের অবস্থানের জন্য তারা এখানে কয়েকটি কটেজও নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী রিসোর্ট এটি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এই রাজবাড়িতে বেশ কয়েকজন কর্মচারী সবকিছুর দেখাশোনা করছে।
ইতিহাস
নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর প্রথম পুরুষ শাহ আতিকুল্লাহ, বাগদাদ হতে দিল্লীতে আসেন ।
তৎকালীন দিল্লীর বাদশাহ তার কাছে মুরীদ হন এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলায় বসবাসের জন্য জায়গীর প্রদান করেন। প্রথমে তিনি পাবনা জেলার নাকালিয়াতে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তী বংশধরগণ নাকালিয়া হতে ঢাকা জেলার হাসমিলানে চলে আসেন। শাহ আতিকুল্লাহ‘র অধস্তন বংশধর শাহ সৈয়দ খোদাবখশ। তার এক ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহ, এক মেয়ে সাইয়িদা তালিবুন নেছা চৌধুরানী। পাঠানদের পতনের যুগে তুর্কীদের জমিদারী ছিল ধনবাড়ীতে। এ বংশের উত্তর পুরুষ ছিলেন রাজা আলী খাঁ সাহেব।
বংশাই ও বৈরান নদীর মাঝখানে অপূর্ব নৈসর্গিক প্রকৃতির মাঝে এ বাড়ির অবস্থান। চন্দ্র বংশীয় রাজা যশোধর সাবেক পুখুরিয়া (বর্তমানে ধনবাড়ি এই পরগণার অন্তর্গত ছিলো) শাসক ছিলেন মোগল আমলে। তার সেনাপতি ছিলেন গৌড়ের সুলতানের ওমরাহ ধনুয়ার খাঁ। তিনি কৌশলে রাজ্যটি দখল করে পুত্র ইস্পিঞ্জার খাঁকে দিয়েছিলেন।
এই ইস্পিঞ্জার খাঁ ও তার ভ্রাতা মনোয়ার খাঁ ধনবাড়িতে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন অবশ্য জমিদারি প্রতিষ্ঠা নিয়ে অন্য মতবাদও রয়েছে। ধনবাড়ি জমিদার বাড়ির প্রধান আবাস ভবন, কাঁচারি ভবন, তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ ও কবরস্থান সমন্বয়ে পরিকল্পিত। প্রধান আবাস ভবনটি একটি বেষ্টনি প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। এর অভ্যন্তরে রয়েছে প্রশস্ত একটি বাগিচা। ধারণা করা হয় ইস্পিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ছিলেন ধনবাড়ি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদটি ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিলের বাইরে দিঘির পাড়ে অবস্থিত।
জমিদারবাড়ি বর্তমান অবস্থানের
ইতিহাস
বাংলাদেশের বেশীরভাগ জমিদারবাড়ির মালিক ছিলেন হিন্দু জমিদারেরা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর এদের মাঝে বেশীরভাগ প্রভাবশালী জমিদারেরাই দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন অথবা ধর্মীয় গোঁড়ামির কারনে তাঁদের একঘরে করে দেওয়া হয়। এর ফলে এসব জমিদারবাড়ি অরক্ষিত অবস্থায় থেকে যায়। পরবর্তীতে কিছু জমিদারবাড়ি সরকার অধিগ্রহন করে তাঁদের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করলেও বাদবাকি জমিদারবাড়িগুলো অযত্ন এবং অবহেলায় ধ্বংসের মুখে রয়েছে।
ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল অন্যান্য জমিদারবাড়ির চেয়ে ভিন্ন। মুসলিম জমিদার এই বাড়িটির মালিক হওয়াতে তাঁদের দেশত্যাগ করতে হয়নি। তাঁরা তাঁদের শাসনকালে যেমন ক্ষমতাধর ছিল তেমনি এখনও নিজ নিজ অঞ্চলে তাঁদের প্রভাব বিদ্যমান। আর এ কারনেই তাঁদের মালিকানার জমিদারবাড়িগুলোর অবস্থা এখনও বেশ ভাল এবং এসব জমিদারবাড়ির যথাযথ যত্ন ও রক্ষনাবেক্ষন করা হচ্ছে।
১৯১৯ সালে ইংরেজ লর্ড রোনাল্ডশ্যকে আমন্ত্রন জানাতে নবাব আলী চৌধুরী এই জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন। লর্ড রোনাল্ডশ্য স্টিমারে করে কয়ড়ার কাছে এসেছিলেন এবং তাঁকে ৩০টি হাতির মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। [সূত্র: www.dctangail.gov.bd];
নবাব পরিবারের একজন উত্তরসূরী নবাব হাসান আলী চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া ১৯৭৮ সালে তিনি একজন সংসদ সদস্যও ছিলেন। নবাব হাসান আলী চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে তাঁর কন্যা সৈয়দা আশেক আকবর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। উপরোক্ত তথ্য আপনাকে এই নবাব পরিবারের প্রভাব ও ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা দেবে এবং আপনি বুঝতে পারবেন আজও কিভাবে এই নবাবমঞ্জিল এতোটা ভাল অবস্থায় রয়েছে।
নবাব মঞ্জিলে প্রবেশ
ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিলে প্রবেশ করতে আপনাকে ৩০/- টাকা দামের টিকেট কাটতে হবে। প্রতিটি টিকেট নবাব মঞ্জিলে প্রবেশ করার দুই ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। নবাব মঞ্জিলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ কঠোর এবং এখানকার কর্মচারীরা বেশ সাহায্যপরায়ন। এখানে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না তাই আপনি নির্বিঘ্নে নবাব মঞ্জিল ঘুরে দেখতে পারবেন।
ধনবাড়ী মসজিদ
ধনবাড়ী মসজিদ টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার পৌরসভায় অবস্থিত। এটি ধনবাড়ী উপজেলার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ ও কবরস্থান সমন্বয়ে পরিকল্পিত। যা ধনবাড়ি জমিদার বাড়িতে অবস্থিত।
কিভাবে যাব
ব্যাক্তিগত অথবা ভাড়া গাড়িতে করে নবাবমঞ্জিলে আসাই ভাল কারন এখানে আসার জন্য যে বাসগুলো রয়েছে সেসব মোটেই আরামদায়ক নয়। ঢাকা থেকে ব্যাক্তিগত অথবা ভাড়া গাড়িতে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় আপনি এখানে এসে যাবেন।
বাসে করে যেতে চাইলে আপনি বিনিময় পরিবহনে যেতে পারেন। এই বাসটি ঢাকার মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় এবং ধনবাড়িতে ঠিক রাজবাড়ির সামনেই থামে। লোকাল সার্ভিস হওয়াতে এই বাসটিকে অনেক থামতে হয় তাই আপনার পৌছাতে প্রায় ৬ ঘণ্টা থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগবে। আপনার জেনে রাখা ভাল যে অতিরিক্ত ভিড়ের কারনে এই বাসে যাত্রীদের দাঁড়ান অবস্থায়ও ভ্রমন করতে হয়।
এছাড়া নিরালা পরিবহন নামক বাসেও চড়তে পারেন আপনি। এই বাসটি মহাখালি থেকে ছেড়ে যায় এবং আপনি প্রায় ৩ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে পৌছাতে পারবেন। সরাসরি টাঙ্গাইল যাওয়াতে এই বাসটিকে থামতে হয়না। টাঙ্গাইল থেকে প্রায় ২ ঘণ্টায় সিএনজি অটোরিকশায় করে আপনি রাজবাড়িতে পৌছাতে পারবেন।
গ্যালারী
মোমের দেয়াল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন