Here are pictures and details of the fascinating places of the world.

Full width home advertisement

Post Page Advertisement [Top]


পৃথিবীতে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য দুধের তৈরি মিষ্টি আছে যার কারণে ওই দেশ এবং অঞ্চল বিখ্যাত। যেমন ভারতের দিল্লির লাড্ডু, আলমোড়ার বালামিঠাই, লাল মোহন; পশ্চিমঙ্গের রাজভোগ রয়্যাল, অমৃতকুম্ভ, রসমালঞ্চ, ছানার টোস্ট; পাকিস্তানের সোনা মিয়ার মিষ্টি, গোলাপজামুন; নেপাল শ্রীলংকার গোলাপ জাম লাল মোহন উল্লেখযোগ্য। তেমনি বাংলাদেশের সাথে মিশে আছে পোড়াবাড়ির চমচম, বগুড়ার দই, মুক্তাগাছার গোপাল পালের মন্ডা, কুমিল্লার রসমালাই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখি নেত্রকোনার বালিশ।


টাঙ্গাইলের চমচম
চমচম বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। ছানার তৈরি একপ্রকার মিষ্টি খাবার বিশেষ। টাঙ্গাইলের চমচম খুবই বিখ্যাত মিষ্টি টাঙ্গাইল জেলায় চমচম, দানাদার, রসগোল্লা, আমৃত্তি, জিলাপী, সন্দেশ, বিভিন্ন প্রকার দই, খির, নই, টানা, খাজা, কদমা, বাতাসা ইত্যাদি মিষ্টি তৈরি হয়। কিন্তু টাঙ্গাইলের মিষ্টি শিল্পে পোড়াবাড়ির চমচমই মিষ্টির রাজা। সুস্বাদু লোভনীয় এই চমচম মিষ্টি টাঙ্গাইলের প্রায় ২শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য। বাংলা, বিহার, ছাড়িয়ে ভারতবর্ষ তথা গোটা পৃথিবী জুড়ে এর সুনাম রয়েছে। লালচে রংয়ের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুড়ো থাকে এর ভিতরের অংশ রসাল নরম। লালচে গোলাপী আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ থাকে কড়া মিষ্টিতে কনায় কনায় ভরা। এই সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান খাঁটি দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা এলাচ দানা হলেও টাঙ্গাইলের চমচম তৈরির মূল রহস্য এখানকার পানির মধ্যে নিহিত।

বগুড়ার দই
বগুড়ার দই মিষ্টি স্বাদে গুণে অতুলনীয় হওয়ায় দেশ বিদেশে সকলের কাছে অতি প্রিয় বগুড়ার দই এর স্বাদ এখন সকলের মুখে মুখে। এখন যেকোনো অনুষ্ঠানাদিতে খাওয়ার শেষে বগুড়ার দই না হলে তৃপ্তি হয় না। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়ায় এসে দইয়ের স্বাদ পেয়ে ব্রিটেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠান এই দই। বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের গোড়ার দিকে তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়া নওয়াববাড়ি বেড়াতে এসে প্রথম দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। কিছু বিশেষত্বের কারণেবগুড়ার দই’-এর খ্যাতি দেশজুড়ে। উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে কারিগরদের (উৎপাদক) বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা যত্নবান হওয়ায় বগুড়ার দই স্বাদে-গুণে তুলনাহীন। বগুড়ার দই ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া, রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকে পৌছে যাওয়া বগুড়ার জন্য গর্বের বিষয়।

কুমিল্লার রসমালাই
দেশের বিভিন্ন স্থানে রসমালাই তৈরি হলেও তাই কুমিল্লার রসমালাই স্বাদে অতুলনীয়। স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকেই কুমিল্লার রসমালাই, দই মিষ্টির সুনাম দেশের সর্বত্র। কুমিল্লার রসমালাই কেবল বাংলাদেশে নয় পুরো উপমহাদেশেই ভোজনরসিকদের কাছে একটি পরিচিত খাবার। বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আপ্যায়ন করেছে কুমিল্লার রসমালাই দিয়ে। আর পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে নিয়মিতভাবে ভারতে যাচ্ছে এসব রসমালাই। ইদানিং ডায়াবেটিক রোগীদের কথা মাথায় রেখে চিনি ছাড়া রসমালাইও তৈরি হচ্ছে এসব দোকানে। বর্তমানে প্রকৃত স্বাদের রসমালাই পাওয়া যায়, কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় মনোহরপুরে অবস্থিত মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার, শীতল ভাণ্ডার, জলযোগ, জেনিস, পোড়াবাড়ি, পুলিশ লাইনের পিয়াসা, ঝাউতলার অমৃত সুইটস পিয়াসার মিষ্টি দোকান। তবে উৎকৃষ্ট সুস্বাদু রসমালাই পেতে হলে আসতে হবে মনোহরপুরে অবস্থিত মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী শীতল ভাণ্ডারের দোকানে। কুমিল্লার মাতৃ ভাণ্ডারের আদি প্রতিষ্ঠান মনোহরপুরের মাতৃ ভাণ্ডার। এটি স্থাপিত হয় ১৯৩০ সালে। বর্তমানে কুমিল্লার মাতৃ ভাণ্ডারে কেজি রসমালাইয়ের দাম ২৪০ টাকা আর প্লেটের দাম ৪০ টাকা। তবু শুধু মাতৃ ভাণ্ডারেই প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় কয়েক লাখ টাকার রসমালাই।

মুক্তাগাছার মণ্ডা
মুক্তাগাছার মণ্ডার নাম শোনেননি ভোজনরসিকদের মাঝে এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মুক্তাগাছা মণ্ডার জন্য সুপ্রসিদ্ধ। মুক্তাগাছার এই মন্ডা শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীখ্যাত। প্রথম মণ্ডা তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে মণ্ডার মূল উপাদান দুধ চিনি বর্তমানে ২০টির এক কেজি মন্ডা ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। মণ্ডা তৈরির পর ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয় না। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গরমের সময় / দিন শীতকালে ১০/১২ দিন ভালো থাকে। পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান কৃষ্ণ রায়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সারোদ বাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, রাশিয়ার কমরেড স্ট্যালিন মণ্ডা খেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। আসল মন্ডা একমাত্র গোপাল পালের আদি মণ্ডা হিসাবে পরিচিত যার কোন শাখা নেই।

নাটোরের কাঁচাগোল্লা
স্বাদে অতুলনীয় মিষ্টান্ননাটোরের কাঁচাগোল্লা নামে কাঁচাগোল্লা হলেও মিষ্টান্ন কিন্তু কাঁচা নয়, আবার দেখতে গোলও নয়। খাঁটি দুধের তৈরি ছানা আর পরিমাণ মতো চিনি দিয়ে তৈরি হয় কাঁচাগোল্লা। বর্তমানে নিচাবাজার কুন্ডুর দোকান, জয়কালি মিষ্টির দোকান, মৌচাক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারসহ বেশ কিছু দোকানে মানসম্মত কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায়। প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে প্রতিকেজি কাঁচাগোল্লার দাম পড়বে /৫শটাকা। খাঁটি দুধের ছানা চিনি কাঁচাগোল্লা তৈরির প্রধান উপাদান। কেজি কাঁচাগোল্লা তৈরি করতে প্রায় কেজি কাঁচা ছানা লাগে। এই ছানা হতে হবে ননি সর না তোলা দুধের। ৪০০ গ্রাম চিনি কড়াইতে নিয়ে পরিমাণমত পানিসহ জ্বাল দিতে হয়। সময় কাঠের খন্তা দিয়ে নাড়তে হয়। এভাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধারাবাহিকভাবে নাড়তে নাড়তেই কাঁচাগোল্লা তৈরি হয়ে যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখি
বৃটিশ রাজত্বকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টি, ছানামুখি এর সুখ্যাতি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টির সুনামের পেছনে যে ব্যক্তির নাম জড়িত তিনি হলেন মহাদেব পাঁড়ে। তার জন্ম স্থান কাশী ধামে। তার বড় ভাই দুর্গা প্রসাদ কিশোর মহাদেবকে নিয়ে কলকাতায় আসতে হয়। বড় ভাই এর মিষ্টির দোকানে মিষ্টি তৈরি শুর করেন বালক মহাদেব। কিন্তু অময়ে বড় ভাই দুর্গা প্রসাদ পরলোক গমন করেন। নিরাশ্রয় হয়ে মহাদেব বেড়িয়ে পড়লেন নিরুদ্দেশে। অবশেষে এলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরে। শতাধিক বছর পূর্বে তখন শহরের মেড্ডার শিবরাম মোদকের একটি মিষ্টির দোকান ছিল। তিনি মহাদেবকে আশ্রয় দিলেন। মহাদেব আসার পর শিব রামের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুর সময় শিবরাম তার মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুর সময় শিবরাম তার মিষ্টির দোকানটি মহাদেবকে দিয়ে যান। জানা যায়, ভারতের বড়লাট লর্ড ক্যানিং এর জন্য একটি বিশেষ ধরনের মিষ্টি তৈরী করে পাঠানো হয়েছিল কলকাতায়। লর্ড ক্যানিং এবং স্ত্রী লেডী ক্যানিং মিষ্টি খেয়ে খুব প্রশংসা করেছিলেন। এরপর মিষ্টির নাম রাখা হয়লেডি ক্যানিং বর্তমানে যালেডি ক্যানিনামে পরিচিত। তার তৈরি আর একটি মিষ্টির নামছানামুখি ছানামুখি বাংলাদেশের অন্য কোথাও তৈরি করতে পারে না। ছানামুখির সুনাম এখনও দেশ বিদেশে অক্ষুন্ন রয়েছে। ১৯৮৬ সনে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদ্রত অফিসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াঊল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লেডি ক্যানি খেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন যা পাকিস্তানের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল।
নেত্রকোনার বালিশ
প্রসিদ্ধ এই মিষ্টি আকারে বালিশের মত বড় না হলেও দেখতে অনেকটা বালিশের মত, এবং এর উপরে ক্ষীরের প্রলেপ থাকাতে একটি কভারওয়ালা বালিশের মত দেখায়। এই মিষ্টি গয়ানাথের বালিশনামেও পরিচিত। বালিশ তৈরি হয় দুধ-ছানা, চিনি ময়দা দিয়ে। প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। মণ্ড দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে। এর পর ঠাণ্ডা করেও চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। এক সময় তা রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। বিক্রির সময় বালিশের ওপর দেয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই। ছাড়াও বালিশ বানানোর প্রক্রিয়ায় কিছুটা গোপনীয়তা আছে যা ব্যবসার স্বার্থে প্রকাশ করতে চান না কারিগররা। বালিশ বিক্রি হয় পিস হিসেবে। এর সাধারণ সাইজ তিনটি। যার দাম , ১০ ২০ টাকা। ২০০ টাকা মূল্যের বালিশ আকারে ১৩ থেকে ১৪ ইঞ্চি হয়। ওই মিষ্টির ওজন ৮০০ থেকে ১০০০ গ্রাম হয়ে থাকে। ৫০-১০০ টাকা দামের বালিশও বানিয়ে দেন বিক্রেতারা। এর চেয়ে বেশি ওজনের বালিশও অর্ডার দিলে তৈরি করা হয়।

 ( বি দ্র : প্রতিটির আরও  বিস্তারিত পাবেন অন্য এপিসোডে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
। )

সংগ্রহ এবং লিখুন
Nur Mohammad

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Bottom Ad [Post Page]

| Designed by Nur Mohammad